শুভ্র সাদা মেঘ। কুয়াশাগুলো যেন বরফের ভাসমান ভেলা। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে সবুজ পাহাড়। কাক ডাকা ভোরে কুয়াশার বুক চিরে টকটকে লাল সূর্যের আলোর ঝলমল। অতিথি পাখিদের খুনসুটি, আর কিচিরমিচির ডাক। প্রাণের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে আছে এ পাহাড়ে। তারই টানে প্রেমিক যুগল আর তরুণ-তরুণীরা দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছে সেখানে। বলছি-রাঙামাটির সুন্দর পাহাড় ফুরামনের কথা। প্রশাসনিকভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এখনো স্বীকৃতি না পেলেও কমতি নেই পর্যটকদের। শীত কিংবা বর্ষা যেকোনো ঋতুতেই ফুরামনের রূপ বৈচিত্র্য দেখতে মানুষের উপস্থিতি দেখা যায় ওই পাহাড়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখ মানিকছড়ি এলাকার একটি পাহাড়ের নাম ফুরামন। রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ পাহাড়টি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার ৫১৮ ফুট উঁচু ফুরামন পাহাড়। সড়ক যোগাযোগ নেই। পুরো পাহাড় জুড়ে বন আর জঙ্গল। তাই পায়ে হেঁটে উঠতে হয় ফুরামন পাহাড়ে। এ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় দেখা মেলে বৈচিত্র্যময় রাঙামাটির এক অন্যরকম চিত্র। পুরো রাঙামাটি শহরকে এক মুহূর্তে মনে হবে শিল্পীর পটে আঁকা ছবি। এখানে চলে পাহাড়-হ্রদের মিলন মেলা। এখানকার প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। এ অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে রাঙামাটির ফুরামন পাহাড় পরিচিত লাভ করতে খুব বেশি সময় লাগেনি। হিম শীতের আমেজে ফুরামন পাহাড়ের সৌন্দর্যের টানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে হাজার হাজার পর্যটক। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আগত পর্যটকরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছে এখানে। প্রকৃতিকে উজাড় করে দিচ্ছে নিজেকে। আবার অনেকে দলগতভাবে ট্যুর দিচ্ছে ফুরামনকে কেন্দ্র করে। তবে ফুরামন ভ্রমণ করতেও প্রয়োজন চ্যালেঞ্জ ও মনবল। ফুরামন ভ্রমণ করে এমন এক গল্প শোনালেন তাহসিন ও সালাউদ্দিন আরিয়ান। তারা বলেন, বন্ধুদের সাথে ফুরমান পাহাড় ভ্রমণ করি। ফুরামনে যেতে হলে ফজরের আজানের আগেই রওনা দিতে হবে। কারণ ওই পাহাড়ে পায়ে হেঁটে উঠতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। পাহাড়ের পাশে একটি বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। তাই কিছুটা সড়কে পাকা ও কাঁচা সিড়ি আছে। প্রায় ৪১৩টি পাকা সিড়ি ও আরও বেশ কিছু মাটির সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে দেখতে পেয়েছি। প্রথমে একটু ক্লান্তিভাব থাকলেও ফুরামনের চূড়ায় ওঠার পর মনেই থাকবে না ওই ক্লান্তির কথা। কারণ ফুরামনের সৌন্দর্য এতোটাই সুন্দর, তা কল্পনাতেও কল্পনা করা যাবে না। তবে ফুরামনে ওঠার আগে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে রাখতে হবে। যেমন-বাঁশের লাটি (যা হাঁটার পথে সহযোগিতা করবে), স্যালাইন, পানি ও হাল্কা খাবার।